পেকুয়া প্রতিনিধি ::
পেকুয়ায় দুর্ধর্ষ ডাকাতসহ ২ জনকে আটক করেছে পেকুয়া থানা পুলিশ। উপজেলার রাজাখালী ও পেকুয়া ইউনিয়নে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গতকাল বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে রাজাখালী ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়ির আইসি রিদুয়ানের নেতৃত্বে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ডাকাতকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ডাকাতের নাম আবুল কাসিম প্রকাশ কালু (৪০)। সে ওই এলাকার ওই ইউনিয়নের রায়বাপের পাড়া এলাকার পেঠান আলীর পুত্র। পেকুয়া থানার এস,আই শিমুল বড়–য়া জানায়, গ্রেফতারকৃত ডাকাত এসটি জিআর ৫১/০৭, জিআর ১০৬/১০ মামলার পলাতক আসামী। সে দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক ছিল। তার গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। অপরদিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন(৩৫)কে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বিকেল ৪ টার দিকে পেকুয়া থানার এস,আই শিমুল বড়–য়ার নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্সসহ তাকে গ্রেফতার করে। সে ওই এলাকার শফি আলমের পুত্র। পেকুয়া থানার এস,আই শিমুল বড়–য়া জানান, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া এলাকা থেকে ৫৩ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করে।
###########
পেকুয়ায় মেহেরনামায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের দক্ষিন মেহেরনামায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনাসহ নানা অপরাধ তৎপরতা বেড়ে গেছে। সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকটি পক্ষের মধ্যে। এতে করে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে মেহেরনামা এলাকায় সম্প্রতি দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পেকুয়া থানায় গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা দেলোয়ার হোসেন(১৭)কে আসামী করা হয়। সৃষ্ট ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী শামশুদ্দোহা,বিএনপির রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা। একটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ১ জন নারী বাদী হয়ে এ মামলায় শামশুদ্দোহাকে প্রধান আসামী করে। এ মামলায় ৯ জন আসামী। অপরদিকে শামশুদ্দোহার ২ টি মামলায় একই পরিবারের ৪ জনসহ পৃথক ১৭ জনকে আসামী করা হয়। আসামীদের মধ্যে সদর ইউনিয়নের আ’লীগের প্রবীন সংগঠক ও সাবেক মেম্বার ফিরোজ আহমদ, তার ছেলে ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা আতিকুর রহমান, ছাত্রলীগ সদর ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ মেম্বারের নাতী দেলোয়ার হোসেন(১৭) কে আসামী করা হয়। পাল্টাপাল্টি মামলা ও হাকাবকাসহ মুখোমুখি অবস্থানকে ঘিরে মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেষা সদর ইউনিয়নের দক্ষিন মেহেরনামায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। পুলিশ ১ জনকে আটক করে। তবে আটককৃত ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিএনপি নেতা শামশুদ্দোহা চক্রান্তের ফাঁদে তাকে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে ফাঁসায় বলে দক্ষিন মেহেরনামার লোকজন নিশ্চিত করেছেন। আটককৃত ব্যক্তির নাম ইয়ার মোহাম্মদ। তিনি জেল হাজতে অন্তরীন। পৃথক ঘটনায় ১ টি মামলার বাদী ইয়ার মোহাম্মদের স্ত্রী মোর্শিদা বেগম(৩০)। গত ২৬ জানুয়ারী পেকুয়া থানায় ১ টি সাধারন ডায়রী লিপিবদ্ধ হয়। যার নং ১০৩১। সেটি পরবর্তীতে মামলায় রুপান্তর হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সুত্র জানায়, গত ১৯ জানুয়ারী শামশুদ্দোহার নেতৃত্বে একদল উত্তেজিত লোকজন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে ধরতে ফিরোজ মেম্বারের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা দেলোয়ারকে ব্যাপক মারধর করে। টানা হেচড়া করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বাঁচাতে এলাকাবাসীরা ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনার জের ধরে শামশুদ্দোহা পেকুয়া থানায় ১৪ জানুয়ারী ও ১৯ জানুয়ারী ৬ দিনের ব্যবধানে ২ টি মামলা দায়ের করে। যার নং ১১/১৭, ৭/১৭। সুত্র জানায়, শামশুদ্দোহা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় এ ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে তার দলের মধ্যে। এ সময় ফিরোজ মেম্বার ও আতিকুর রহমান গংদের হামলা চালাতে বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ক্যাডাররা মেহেরনামায় যায়। রাতে তারা ফিরোজ মেম্বারের বাড়ি ও ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে হানা দেয়। অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে এলাকায় ভীতি ছড়ায় শামশুদ্দোহার অনুগত ভাড়াটে লোকজন। এ সময় ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে রাতে আক্রমন করে তারা। ইয়ার মোহাম্মদের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম বিষয়টি মুঠোফোনে পেকুয়া থানার পুলিশকে জানায়। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা এস,আই কামরুল হাসান ওই মহিলার অপর প্রান্ত থেকে মুঠোফোন পেয়ে তেলে বেগুনে জ¦লে উঠেন। মুর্শিদা বেগম জানায়, এস,আই কামরুল আক্রমনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তাকে উল্টো হাকাবকা ও ধমকি দেয়। মুর্শিদা জানায়, এস,আই কামরুল সরাসরি বিএনপি নেতা শামশুদ্দোহার পক্ষে অবস্থান নেয়। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার স্বামীকে মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠায়। আতিকুর রহমান জানায়, শামশুদ্দোহা একজন বর্বর ও নিকৃষ্ট চরিত্রের অত্যাচারী মানুষ। সে বিএনপি করে। আর আমরা করি আ’লীগ। তার অত্যাচারে এখানে আওয়ামী রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। সে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী। পুলিশ এ সল্ট মামলাসহ তার বিরুদ্ধে ১০/১২ টি মামলা রয়েছে। সরকার উৎখাত করতে গত কয়েক বছর আগে তার নেতৃত্বে মেহেরনামা থেকে বিএনপির ক্যাডাররা অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে মিছিল নিয়ে পেকুয়া প্রশাসনিক কেন্দ্রে এসেছিল। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী মামলা হয়। ফিরোজ মেম্বার জানায়, শামশুদ্দোহা অত্যাচারী বিএনপি নেতা। পুলিশ তার কথায় উঠাবসা করে। এস,আই কামরুল আ’লীগ নিধনে ফের পেকুয়ায় এসেছে। দুটি মামলায় আসামী করা হয়েছে আমাকে এ বয়সে। দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলাম। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছি। জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি। কিন্তু আজকে বিএনপির এ সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে আসামী করার খেলায় মেতেছে। সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এম,আজম খান জানায়, ফিরোজ মেম্বার আমার ইউনিয়ন আ’লীগের সহসভাপতি, তার ছেলে আতিক ওয়ার্ড আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা আ’লীগের তৃনমুলের প্রান। আসলে ফিরোজ মেম্বারের পরিবার আ’লীগের পক্ষে অবস্থান না নিলে এখানে কারও পক্ষে আ’লীগ বলে পরিচয় দেওয়ার মত সাহস রাখে না। শামশুদ্দোহার বিএনপির আমলে জ্যান্তা মহিষ ধরে নিয়ে জবাই করে মাংস বিক্রি করেছে। আ’লীগের রাজনীতি করে বলে সে সময় এ মহিষটি তারা বিল থেকে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিচার চলছে বর্তমানে। আসলে প্রশাসন এ ভাবে হলে আমরা কিভাবে আ’লীগ করব।
#############
পেকুয়ায় বিক্ষোভ করেছে লবণ চাষী
পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ায় বিক্ষোভ করেছে উপকুলীয় মগনামা ইউনিয়নের লবণ চাষী। সাবমেরিন নৌঘাঁটিতে সাময়িক লবণ উৎপাদন অধিকার দাবীতে শত শত প্রান্তিক চাষী ও লবণ উৎপাদনকারী কৃষক বিক্ষোভে মিলিত হন। গতকাল ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে মগনামার লবণ চাষীরা পেকুয়ায় সদরে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করে। এ সময় তারা পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনিক দপ্তরে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত দাবী দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রেরন করে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে টনক নাড়াতে ও জেলা প্রশাসক কক্সবাজারকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে দরিদ্র এ সব প্রান্তিক চাষীরা উপজেলায় জড়ো হয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে যায়। এ সময় পেকুয়ার ইউএনও মাহাবুবউল করিম বরাবর স্মারকলিপি পৌছায়। সকালে মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিন অংশ থেকে প্রায় ৩শতাধিক লবণ চাষী সড়ক প্রদক্ষিন করে পেকুয়া সদরে পৌছে। ব্যানার নিয়ে তারা শান্তিপূর্ন ও অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এ কর্মসুচীতে অংশ নেয়। লবণ চাষীরা পেকুয়া চৌমুহনী এবিসি সড়কে কিছুক্ষন অবস্থান নেয়। তারা সারিবদ্ধ দাড়িয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করে। এ সময় উপজেলার প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে কিছুক্ষন অবস্থান নেয়। লবণ চাষীরা জানায়, সাবমেরিন নৌঘাঁটিতে তারা অনুপ্রবেশ করে সেখানে লবণ উৎপাদন কার্য চলমান রাখেন। গত ২ মাস আগে তারা লবণ উৎপাদনে জমিতে নেমে যান। মাঠ প্রস্ততিসহ এ সব জমিতে লবণ উৎপাদন উপযোগী সময় হয়েছে মাত্র। শীতকালে রৌদ্রের তীব্রতা কম থাকে। আর্দ্রতা হ্রাস থাকায় লবণ উৎপাদনের উপযোগী সময় নই। তবে আগামী ৩ মাস পর্যন্ত মৌসুম আছে। এ সময় টুকু তারা উৎপাদন সময় পেয়ে থাকলে মুখে হাসি ফুটবে। তারা জানায়, সরকার উন্নয়নের জন্য জমি অধিগ্রহন করে। আমরা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে জমি সরকারকে দিয়ে দিয়েছি। তবে নৌবাহিনী এখনও উন্নয়ন কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হননি। বিশাল জমি পতিত রয়েছে। আমরা এসব জমিতে আবাদ উপযোগী করে লবণ উৎপাদন কাজে নেমে গিয়েছি। একদিকে দারিদ্র বিমোচন ও স্থানীয় অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব নিশ্চিত করতে আমাদের এ শ্রম। নৌঘাঁটিতে প্রায় ১ হাজার মানুষ জীবিকায় নিয়োজিত। আমরা অত্যন্ত গরীব ও বেকার। অনন্য উপায় হয়ে জমিতে কায়িক শ্রম দিয়ে লবণ উৎপাদন কাজে জড়িয়ে গেছি। এখানে শ্রম, অর্থ, বিনিয়োগ কর্মজীবি সব কিছু জড়িত। নৌবাহিনী বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে জমি ছেড়ে দিতে। এই খবরে আমরা হতাশ হয়েছি। এ মুহুর্তে জমি থেকে বিতাড়িত হলে সর্বনাশ ডেকে আসবে আমাদের কপালে। আমরা উচ্ছেদ হলে যাব কোথায়। করব কি? খাব কি? বাপদাদার পেশা লবণ চাষ। সরকারকে আহবান করব আর জমিতে নামব না। আমরা জমি দিয়ে দিয়েছি। তবে এ মৌসুম টুকু শেষ করতে চাই। না হয় হাজার হাজার মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা সৃষ্টি হবে। অন্ধকার নেমে আসবে আমাদের কপালে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব উল করিম জানায়,তারা লবণ চাষ চালিয়ে যেতে ২-৩ মাস সময় চেয়ে একটি লিখিত দাবী উত্তাপন করে। আমি সেটি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবর পৌছাব। আসলে নৌবাহিনীর জমিতে কি করবে না করবে সেটি তাদেরই বিষয়।
পাঠকের মতামত: